ক্যারিয়ার ডেস্কঃ
ছেলেটির নাম মোহাম্মদ আব্দুল; বাবা মাকে হারিয়েছে শৈশবে। বড়ো হয়েছে ভাই-ভাবীদের কাছে থেকে। আট-দশটা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো তার পরিবার তাকে দেখায়নি কোনো বড়ো স্বপ্ন। বলেছে পড়া লেখা করো, তারপর চাকরি খোঁজ। আব্দুল নিজেও এর ব্যাতিক্রম কোনো কিছু ভাবতে পারেনি। খুব আহামরি ভালো স্টুডেন্ট সে কোনোদিনই ছিল না। রাজশাহী বোর্ড থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হলো, খুব সাদা মাটা ফলাফল নিয়ে বাণিজ্য বিভাগ থেকে। উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় পাড়ি জমালো রাজধানী শহর ঢাকাতে। পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে খুব সহজেই বুঝতে পারে তার পক্ষে পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়ে জায়গা করে নেয়া অসম্ভব। জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীনস্ত একটি সরকারি কলেজ ব্যাবস্থাপনা বিষয়ে ভর্তি হয়ে শুরু হয় তার চার বছর মেয়াদি স্নাতক সম্মান শিক্ষা জীবন।
স্নাতক সম্মান শিক্ষা জীবন শুরুর প্রথম দিকে উৎসাহের কমতি ছিল না। কিন্তু যত সময় এগুতে লাগলো হতাশা যেন বাড়তে লাগলো। বড়ো ভাই যারা উল্লেখযোগ্য রেজাল্ট নিয়ে পাস করেও পায়নি কোনো ভালো চাকরি; যদিও বলা হয় চার বছর মেয়াদি স্নাতক সম্মান কিন্তু প্রোগ্রাম শেষ হতে সময় নিলো সাত বছর; কি করবো, কি হবে ভাবতে ভাবতে আরো হতাশা গ্রাস করতে থাকে আমাদের আব্দুলকে।
স্নাতক সম্মান শিক্ষা জীবন শেষ করে ভর্তি হয় স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে এবং স্বপ্ন বাধে এবার নিশ্চয় ভালো কিছু হবে। স্নাতকোত্তর শিক্ষা জীবন শেষ হতে সময় নেয় আরো আড়াই বছর যদিও বলা হয় সময় লাগে এক বছর।
চারিদিকে শুধু হতাশা, এমন সময় এক বন্ধুর কাজ থেকে জানতে পারলো সে জাপানি ভাষা শিখছে কারণ সে জাপান যাবে। বিদেশ যাবে পড়াশুনা করতে, সে তো অনেক খরচের ব্যাপার; কিন্তু আব্দুল জানতে পারলো জাপানে পড়াশুনা খরচ তলানামূক ভাবে কম; সেই সাথে রয়েছে ২৮ ঘণ্টা খন্ড কালীন কাজের সুবিধা স্টুডেন্ট থাকা কালীন সময়ে। আব্দুল আরো জানতে পারলো ২৮ ঘণ্টা খন্ড কালীন কাজের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে এবং জাপানে যাবার সাথে সাথে কাজে যোগদান করা যায়।
নতুন এক আশায় বুক বাধে আমাদের আব্দুল কিন্তু বয়স তো পেরিয়ে গিয়েছে একত্রিশ বছর; পারবে কি যেতে তার স্বপ্নের লক্ষে ? ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য জোগাড় করা শুরু করে কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পেলো না তার কাঙ্খিত তথ্য সমূহ। এরই মাঝে ঘোরা হয়ে গেছে প্রায় সকল সুপরিচিত এজেন্সী গুলোতে। শেষ পর্যন্ত তার কাঙ্খিত তথ্য সমূহ খুঁজে পেলো ড্যাফোডিল জাপান আইটি নামক এক প্রতিষ্টান থেকে। ভালো লেগেছে তাদের ব্যবস্থাপকের আন্তরিকতা। মনে হলো ভরসা রাখা যায় এই প্রতিষ্ঠানটির উপর।
শুরু করলো আব্দুল তার ভাষা শেখা এবং সিলেকশন ইন্টারভিউ তে চান্স পেলো হিরোশিমা ইন্টারন্যাশন বিসনেস কলেজএ অক্টোবর ২০১৯ সেশনএ। এজেন্সির সার্বিক সহযোগিতায় এবং নিজের আত্মবিশ্বাস ও অধ্যাবসায় দ্বারা সকল পেপার সাবমিট করার পর রেজাল্ট এলো সেপ্টেম্বর ২০১৯। স্বপ্নের COE (সার্টিফিকেট অফ এলিজিবিলিটি) হাতে পেয়ে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলো না আমাদের আব্দুল। শুরু হলো নতুন করে প্রিপারেশন নেয়া জাপান এম্বেসী ইন্টারভিউ এর জন্য। ব্যাংকস পেপারস; ট্যাক্স পেপারস সমস্যা তো নতুন কিছু না কিন্তু সাথে আছে নিবেদিত ডকুমেন্টেশন টীম এবং ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্সট্রাক্টর টীম। অবশেষে আসলো জীবনের সর্বোচ্চ অপেক্ষমান সেই সময়, পাসপোর্ট ডেলিভারি ডেট জাপান এম্বেসী থেকে; ভিসা হাতে পাবার পরে নিজেকে অনেক হালকা লাগছে, এক মুহূর্তে ভেসে উঠলো বিগত সাত মাসের নিরলস পরিশ্রম। আজ আমাদের আব্দুল ৩ বছরের ওয়ার্ক পার্মিট ভিসায় রয়েছে এবং ইন-সা-আল্লাহ অচিরেই পৌঁছেই যাবে তার কাঙ্খিত গন্তব্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি স্টেটাসএ।
বন্ধুরা এরকম আরো অনেক আব্দুল রয়েছে যারা চরম হতাশা মধ্যে অতিবাহিত করছে তাদের সময়; তাদের উদ্দেশে বলতে চাই জীবনটা এক আঁকা বাঁকা পথ যার শুরু টা দুর্গম হলেও রয়েছে অপার সম্ভাবনা যদি আপনি আপনার লক্ষে স্থির থাকেন। অনেক সময় পার করে ফেলেছি; অনেক দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়েছে; সকল সময় খালি ব্যর্থ হয়েছি এসব ভেবে অনুগ্রহ করে সামনের সুযোগ কে অস্বীকার করবেন না। আমাদের নিশ্চয় ভুলে যাওয়া উচিত হবে না " না হবার থেকে দেরিতে হওয়া অধিক ভালো "।
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
এবি রাফি
যোগাযোগঃ
ড্যাফোডিল জাপান আইটি
ড্যাফোডিল কনকর্ড টাওয়ার (নিচ তলা)
১৯/১, পশ্চিম পান্থপথ
মোবাইলঃ ০১৮৪৭১৪০১০৫,০১৮৪৭১৪০১১০